ব্লগে বা ইউটিউব চ্যানেলে গুগল এডসেন্স ব্যবহার করে ঘরে বসেই লাখ টাকা কামাচ্ছে এমন লোকের সংখ্যা নেহায়েত কম না। কিন্তু কিভাবে এটা সম্ভব ? আর গুগল এডসেন্সই বা কি জিনিস? কিভাবে এর মাধ্যমে এতো টাকা আয় করা যায়? আর এডসেন্স কিভাবে ব্যবহার করতে হয় ?

এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সাজানো হয়েছে এই আর্টিকেলটি।

কোর্সটি করতে এখানে ক্লিক করুন

ডোমেইন হোস্টিং ব্ল্যাক ফ্রাইডে অফার 

গুগল এডসেন্স কি ?

শুরুতেই আসুন জেনে নিই গুগল এডসেন্স কি ?

গুগল এডসেন্স হলো সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগলের বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত একটি সার্ভিস। এই সার্ভিসের মাধ্যমে ব্লগারদের ব্লগে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের সুবিধা করে দেয় এবং বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য ব্লগারদের অর্থ প্রদান করে থাকে। ব্লগ থেকে অর্থ উপার্জনের এটাই সবচেয়ে বড় এবং বহুল প্রচলিত মাধ্যম। ব্লগ ছাড়াও এডসেন্সের বিজ্ঞাপন ইউটিউব চ্যানেলেও প্রদর্শন করা যায়।

এখন হয়তো আপনাদের মনে প্রশ্ন আসছে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য গুগল কেনো টাকা দেয় বা কিভাবে দেয়। অথবা বিজ্ঞাপনের জন্য টাকা দিয়ে গুগলের কি লাভ ?

আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন, গুগল এডওয়ার্ড নামে গুগলের আরেকটি সার্ভিস আছে। এই সার্ভিসটি ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ওয়েবসাইট তাদের বিজ্ঞাপন প্রচার করার জন্য গুগলকে টাকা দিয়ে থাকে। তারপর এডসেন্স সার্ভিস ব্যবহার করে ব্লগারদের ব্লগে বা ইউটিউব চ্যানেলে সেই বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে গুগল।

এখনই ফ্রীল্যান্সিং শুরু করুন : এখানে ক্লিক করুন

মনে রাখুন

সোজা কথায়, গুগল এডসেন্স হচ্ছে বিজ্ঞাপনদাতা এবং বিজ্ঞাপন প্রচারকদের মধ্যে মধ্যমব্যক্তি হিসেবে কাজ করে। এখন আসি গুগলের লাভের ব্যাপারে। বিজ্ঞাপনের জন্য বিজ্ঞাপনদাতারা যে পরিমাণ খরচ করে তার ৬৮% ব্লগার বা ইউটিউবারদের দেয় এবং বাকি ৩২% গুগল রেখে দেয়।

আশা করি গুগল এডসেন্স সম্পর্কে আপনার প্রাথমিক ধারণা এখন কিছুটা হলেও পরিষ্কার হয়েছে।

কোর্সটি করতে এখানে ক্লিক করুন

গুগল এডসেন্স মাসে কি পরিমাণ টাকা দেয় ?

এই প্রশ্নের আসলে নির্দিষ্ট কোন উত্তর নেই। আপনি যত বেশি মানুষকে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করাতে পারবেন গুগল আপনাকে ততো বেশি টাকা দেবে। এটাই হচ্ছে প্রাথমিক এবং মূল ব্যাপার।

আপনার ব্লগে যদি প্রতিদিন হাজার হাজার ভিজিটর আসে তাহলে আপনি যে টাকা পাবেন কয়েকশো ভিজিটর হলে তো আর সেই পরিমাণ টাকা পাবেন না। কারণ বিজ্ঞাপন প্রদর্শন কম হবে, ফলে আয়ও কম হবে।

আবার ইউটিউবের ক্ষেত্রেও বিষয়টা একই রকম। যতো বেশি ভিউ ততো বেশি বিজ্ঞাপন প্রদর্শন এবং সেই হারে এডসেন্স থেকে আয়।

কিভাবে বুঝবেন আপনার সাইট/চ্যানেল এডসেন্স উপযোগী কি না ?

নতুন ব্লগার এবং ইউটিউবারদের একটা কমন প্রশ্ন হলো, কিভাবে বুঝবো আমার সাইট/চ্যানেল এডসেন্স উপযোগী কি না ?

এই প্রশ্নের উত্তর আমাকে দুই ধাপে দিতে হবে। প্রথমে বলছি –

ব্লগ/ওয়েবসাইট

অনেকেই হয়তো ভাবেন যে, ওয়েবসাইটের ডিজাইন সুন্দর এবং আকর্ষণীয় হলেও মনে হয় গুগল এডসেন্স এপ্রুভ করে দেয়। ব্যাপারটা আসলে মোটেও এরকম না। গুগল এডসেন্স আপনার সাইটের বা ব্লগের ডিজাইন দেখে না। দেখে কন্টেন্ট। কারণ ভিজিটররা তো আপনার ব্লগে বা সাইটে এসে ডিজাইন দেখবে না, দেখবে কন্টেন্ট। সুতরাং কন্টেন্টের মান যত ভালো হবে এডসেন্স এপ্রুভ হওয়ার সম্ভাবনা ততো বেশি।

এডসেন্স এপ্রুভ হওয়ার কিছু টিপস নতুনদের জন্য দিচ্ছি-
  • আপনার সাইটে ভালো মানের অন্তত ১০-১৫ টি কন্টেন্ট অবশ্যই রাখতে হবে
  • কপি-পেস্ট করা কোন কন্টেন্ট একদমই রাখা যাবে না
  • গুগল এডসেন্সের পলিসি ভঙ্গ করে বা কপিরাইট আইন অমান্য করে এমন কোন কন্টেন্ট রাখা যাবে না
  • এডাল্ট এবং হ্যাকিং এই দুই ধরণের কন্টেন্ট দেওয়া যাবে না
  • সাবডোমেইনে এডসেন্স এপ্লাই করবেন না। মূল ডোমেইনে এপ্লাই করুন। এডসেন্স এপ্রুভ হলে পরবর্তীতে আপনি যত ইচ্ছা সাবডোমেইন খুলে অ্যাড বসাতে পারবেন
  • প্রতিদিন মোটামুটি ভিজিটর আনার চেষ্টা করুন। সাধারণত এডসেন্স এপ্রুভ করার ক্ষেত্রে ভিজিটরের পরিমাণকে অতটা গুরুত্ব দেয় না
  • About Us, Contact Us, Terms and Conditions এবং Privacy Policy এই পেজগুলো অবশ্যই রাখতে হবে, তাহলে খুব সহজেই এডসেন্স এপ্রুভাল পেয়ে যাবেন
  • সাইটে/ব্লগে অন্যকোন কোম্পানির অ্যাড একদমই রাখা যাবে না

আশা করছি, এই বিষয়গুলো খেয়াল রেখে এডসেন্সে এপ্লাই করলে অবশ্যই আপনি এডসেন্স এপ্রুভাল পেয়ে যাবেন।

ইউটিউব এডসেন্স

ইউটিউবে এডসেন্স পাওয়াটা তুলনামূলকভাবে ব্লগ বা ওয়েবসাইটের চেয়ে সহজ। ইউটিউবের পলিসি মেনে কন্টেন্ট তৈরি করুন এবং চ্যানেলে আপলোড দিন। শেষ ১২ মাসে আপনার চ্যানেলের সর্বমোট ওয়াচ টাইম ৪০০০ ঘন্টা পূর্ণ হলে এবং সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ১০০০ হলে আপনি এডসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এডসেন্সে আবেদন করার পর আপনার চ্যানেলটি ইউটিউব রিভিউ করবে।

বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুনঃ 

ইউটিউব চ্যানেল শুরু করার আগে যা জানা দরকার

রিভিউ করে যদি কোন ঝামেলা না পায় অর্থাৎ আপনার আপলোড করা ভিডিওগুলো যদি ইউটিউব পলিসি মেনে তৈরি করা হয় তাহলে কয়েকদিনের মধ্যেই আপনার এডসেন্স আবেদন এপ্রুভ করে দিবে। এরপর আপনার ভিডিওগুলোতেও অন্যদের মতো বিজ্ঞাপন দেখানো শুরু করবে।

গুগল এডসেন্সের জন্য কিভাবে আবেদন করবো ?

বোঝার সুবিধার্থে, এই প্রশ্নের উত্তরটিও দুই ধাপে দিতে হবে। কারণ ব্লগ/ওয়েবসাইটের এডসেন্সে আবেদন করার নিয়ম এবং ইউটিউব চ্যানেলের জন্য আবেদন করার সম্পূর্ণ আলাদা। প্রথমে আসুন ব্লগ/ওয়েবসাইটে আবেদন করার নিয়মটা দেখে নেই-

প্রথমেই আপনাকে Google AdSense এর ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্দিষ্ট ফর্মটি ঠিকঠাকভাবে ফিলাপ করে সাইন-আপ করতে হবে।

আর ইউটিউব চ্যানেলের জন্য আপনার চ্যানেলের ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম এবং ১ হাজার সাবস্ক্রাইবার হয়ে গেলে “Channel Features” পেজে গিয়ে Monetization এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।

গুগল এডসেন্স কিভাবে টাকা পাঠায় এবং কিভাবে টাকা উত্তোলন করবেন ?

বাংলাদেশে গুগল সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠায়। বাংলাদেশে যেসকল ব্যাংক সুইফট কোড প্রদান করে তাদের যেকোন একটির মাধ্যমেই আপনি এডসেন্সের টাকা গ্রহণ করতে পারবেন। তবে প্রথমেই আপনাকে এডসেন্স একাউন্টে লগইন করে সেটিংস অপশনে গিয়ে পেমেন্ট মেথড ঠিক করে দিতে হবে এবং আপনার ব্যাংক একাউন্টের ডিটেলস যেভাবে চেয়েছে সে ভাবে দিতে হবে। সুইফট কোডটি নির্ভুলভাবে দিতে হবে। তা না হলে আপনার কষ্টার্জিত টাকা অন্যের একাউন্টে চলে যাবে।

আসুন এবার আলোচনা করি এডসেন্সে কত টাকা জমা হলে এবং কখন পাঠায়। আপনার এডসেন্স একাউন্টে ১০০ ডলার তার বা বেশি জমা হলেই এডসেন্স চলতি মাসের ২০ থেকে ২৬ তারিখের মধ্যে টাকা নির্দিষ্ট ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়ে দেয়। তবে এক্ষেত্রে এডসেন্স এক মাস দেরিতে পেমেন্ট করে। ব্যাপারটা আসলে এরকম, ধরুন আপনার জুলাই মাসের আয় ১৫০ ডলার। গুগল আপনাকে জুলাই মাসের আয়টা আগস্ট মাসের ২০ থেকে ২৬ তারিখের মধ্যে আপনার একাউন্টে পাঠিয়ে দেবে।

শেষ কথা

আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি গুগল এডসেন্স সম্পর্কে এবং এর কার্যাবলি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়ে গেছেন। তাই আর দেরি করবেন না। অনলাইনে আয়ের ইচ্ছা থাকলে এডসেন্স হতে পারে আপনার জন্য অন্যতম সেরা একটি মাধ্যম। গুগল পলিসি মেনে ঠিকঠাকভাবে কাজ করলে এডসেন্স হতে পারে আপনার সোনার ডিম দেওয়া হাঁস।

লেখক পরিচিতিঃ

Md.Arifur Rahman

Arifur Rahman, Digital Marketing Expert , SEO Expert , Digital Marketing Trainer, PPC Expert ,Social Media Specialist,Consultant, গুগল এডসেন্স

Digital Marketing Expert | SEO Expert | Digital Marketing Trainer |
PPC Expert | Social Media Specialist | Consultant

Sharing Is Caring

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to Top