সোশ্যাল মিডিয়া আজকাল ইন্টারনেট এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বিরাট একটা অংশকে নিয়ন্ত্রণ করছে বলা চলে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৪০ ভাগ অর্থাৎ প্রায় ৩ বিলিয়ন মানুষ প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে নূন্যতম দুই ঘণ্টা ব্যয় করে।

এ সময়টাতে তারা বিভিন্ন পোস্ট এবং ছবিতে লাইক-কমেন্ট করে, পোস্ট শেয়ার করে। অবাক করা একটা পরিসংখ্যান জানাচ্ছি আপনাদের, প্রতি মিনিটে টুইটারে প্রায় ৫ লাখ টুইট এবং স্ন্যাপচ্যাটে ৫ লাখ ছবি শেয়ার করেন ব্যবহারকারীরা।

আকর্ষণীয় এই কোর্সটি করতে এখানে ক্লিক করুন

ফেসবুক এবং ইন্সটাগ্রামের পরিসংখ্যানে এই সংখ্যাটা প্রতি মিনিটে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। যার ফলে বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার পদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রত্যেকদিন লক্ষণীয় হারে বাড়ছে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা। কিন্তু এরপরেও দিনকে দিন ইফেক্টিং আর  এংগেজিং ডিজিটাল কমিউনিটি তৈরি করা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যাচ্ছে।

কারণ দ্রুত বিকাশমান এই সেক্টরে পুরাতন কৌশলগুলো কোন কাজেই আসে না। সফলতা পেতে হলে নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হয় প্রতিনিয়ত। 

কনস্টেন্ট কানেকশন, রিয়েল টাইম এনালাইসিস এবং কৌশলগত পুনর্বিবেচনা ঠিকঠাক ভাবে করতে না পারায় অনেক ডিজিটাল মার্কেটিং ম্যানেজার এবং সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার সফলতার মুখ দেখতে পাচ্ছেন না। অনেককেই আবার হতাশ হয়ে সেক্টর চেঞ্জের চিন্তাভাবনাও করতে দেখা যায়।

২০২০ সালে সফল সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হওয়ার টিপসঃ

ডিজিটাল মার্কেটিং ম্যানেজার কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে প্রত্যাশা পূরণের জন্য আপনাকে বেশ কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে এবং থাকতে হবে কিছু ভালো অভ্যাস। অন্যদের থেকে নিজেকে এক ধাপ এগিয়ে রাখতে এবং সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে সফলতা পেতে হলে ২০২০ সালে এসে যে পাঁচটি অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যাবশ্যক বলে মনে করি সেগুলো হইল –  

১। বড় অডিয়েন্স নয় বরং এংগেজিং কমিউনিটি বিল্ড-আপের দিকে নজর দিন

সোশ্যাল মিডিয়া মানে এই না যে অডিয়েন্স বাড়িয়ে এটেনশন পাওয়া। সোশ্যাল মিডিয়ায় অডিয়েন্স সাইজের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো অডিয়েন্স এংগেজমেন্ট। অর্থাৎ অডিয়েন্স কেমন সাড়া দিচ্ছে। ধরুন আপনার একটা পেইজে ১ লাখ ফলোয়ার আছে।

এই কোর্সটি করতে এখানে ক্লিক করুন

কিন্তু সেখানে কোন পোস্ট করলে সারাদিনে সবেমাত্র ১০০’র মতো লাইক আসে, কয়েকটা কমেন্ট আসে এবং মাঝেমধ্যে দু’একটা পোস্ট শেয়ার হয়। কিন্তু আপনার মাত্র ১০ হাজার লাইকের অন্য একটা পেজে পোস্ট করলে ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ২০০/৩০০ লাইক এবং অনেক কমেন্ট আসে, সাথে পোস্ট শেয়ারও হয় অনেক।

এটাই হলো অডিয়েন্স এংগেজমেন্টের ফল। আপনার ১ লাখ অডিয়েন্স থাকা স্বত্বেও এংগেজমেন্ট কম ছিলো, কিন্তু অন্যটায় অডিয়েন্স কম থাকলেও এংগেজমেন্ট বেশি ছিলো। ফলে রেজাল্টও ছিলো আশানুরূপ।

সুতরাং সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার দের উচিত হবে অডিয়েন্স সাইজের দিকে নয় বরং অডিয়েন্স এংগেজমেন্টের দিকে বেশি নজর দেয়া । এংগেজিং কমিউনিটি বিল্ড আপ করার চেষ্টা করুন। কারণ নন এংগেজিং এক, দুই কিংবা দশ লাখ অডিয়েন্সের কমিউনিটিও কোন কাজে আসবে না।

একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে আপনার অবশ্যই জানতে ও বুঝতে হবে আপনার কমিউনিটিতে কোন ধরণের অডিয়েন্স রাখতে চান এবং অডিয়েন্স আপনার কাছে ঠিক কি চায়। মূলত এই দুইটি ব্যাপারের সামঞ্জস্যতার জন্যই সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ভালো কন্টেন্টও তেমন এংগেজমেন্ট হয় না। 

বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুনঃ 

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং টুলস আপনি কিভাবে বেছে নিবেন ?

ধরুন, আপনি নিশভিত্তিক ছোটোখাটো একটা স্টোরের সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করতে যাচ্ছেন। আপনার অডিয়েন্স সাইজও তাই ছোটই হবে। নিশের উপর নির্ভর করে ধীরে ধীরে কমিউনিটি বিল্ড আপ করা শুরু করুন। অডিয়েন্সের সাথে ইন্টারেক্ট করার চেষ্টা করুন, কমেন্টের রিপ্ল্যাই অডিয়েন্সের প্রশ্নোত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন নিয়মিত। 

সবশেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হলো, আপনার বর্তমান অডিয়েন্সকে টার্গেট করে কন্টেন্ট তৈরি করুন, দেখবেন অটোম্যাটিক্যালি এংগেজিং এবং টার্গেটেড অডিয়েন্স বাড়তে শুরু করবে।

২। সময় নির্ধারণ করে কাজ করুন

দিনের কতটুক সময় আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করেন ? এটা কি আপনার পেশা নাকি সাইড-জব ? 

আদতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ম্যানেজিংয়ের জন্য সময় নির্ধারণ করাটা নির্ভর করছে আপনি দৈনিক ঠিক কত সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করেন তার উপর।

একজন সফল সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হওয়ার মূল চাবি হলো- কন্সিস্টেন্সি বা ধারাবাহিকতা এবং ইন্টেনশন বা উদ্দেশ্য। প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের আপনার পেজগুলোতে চোখ বুলানোর চেয়ে প্রতিদিন নিয়ম করে ঠিকঠাক ভাবে ৩০ মিনিট কাজ করাটাই যথেষ্ট। অহেতুক সময় নষ্ট না করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই একটা টাইম শিডিউল তৈরি করে নিতে হবে। 

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে সফলতার জন্য আপনাকে বেশ কিছু বিষয় মানতে হবে এবং থাকতে হবে কিছু কার্যকরী অভ্যাস

আমি আপনাদের সাথে একটা টেকনিক শেয়ার করছি, এটি পমোদরো টেকনিক (Pomodoro) নামে পরিচিত। রোজ সকাল বেলা কাজ শুরু করার আগে ২৫ মিনিট সময় নিন সারা রাত ধরে যেসব নোটিফিকেশন, কমেন্ট ও মেসেজ এসেছে সেগুলো দেখার এবং রিপ্লাই দেয়ার জন্য। এভাবে আপনার ব্যস্ততার সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে দিনে আরও এক বা দুইবার ২৫ মিনিট করে সময় দিন। 

বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুনঃ 

নতুন বছরে সোশ্যাল মিডিয়া এক্সপার্টরা কোথায় সময় এবং অর্থ ব্যয় করতে যাচ্ছে ?

একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং মানে শুধু পোস্ট করা বা প্রোডাক্ট প্রমোট করেই বসে থাকা নয়। আপনাকে অডিয়েন্স বুঝতে হবে, কানেকশন বিল্ড আপ করতে হবে, অডিয়েন্সের সাথে ইন্টারেক্ট করতে হবে, নিয়মিত কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে, দেখতে হবে অডিয়েন্স কি পছন্দ করছে না করছে।

এই কোর্সটি করতে এখানে ক্লিক করুন

আর এ সবকিছুই করতে হবে একটা নির্দিষ্ট টাইম-ফ্রেম ধরে। সারাদিনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাজ করলে যে রেজাল্ট পাবেন তারচেয়ে বহুগুণ বেশি রেজাল্ট পাবেন টাইম-ফ্রেম ধরে মাত্র ২০/২২ মিনিট কাজ করে। 

সময়, স্ট্র্যাটেজি এবং প্র্যাকটিস এই তিনের সমন্বয় যে ঠিকঠাক ভাবে করতে পারবে সেই সফল হবে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

৩। চাপ কমাতে মেন্টাল হেলথ ব্রেক নিন

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারদের দিনের বেশ অনেকটা সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটাতে হয়। আর এই ব্যাপারটা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর হতে পারে। কাজ করাটা যেমন জরুরী তেমন সুস্থ থাকাটাও বেশি জরুরী।

বিভিন্ন ডাক্তারি পরীক্ষায় এই ব্যাপারটা প্রমাণিত হয়েছে যে, দীর্ঘসময় সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকলে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পরে। তাই যখন অফিস থেকে বের হবেন বা কাজ শেষ হয়ে যাবে, সোশ্যাল মিডিয়া সাইট/অ্যাপ গুলোর নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখুন। খুব জরুরী কোনকিছু হলে ১০-১৫ মিনিটে কাজ সেরে আবার নোটিফিকেশন বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করুন। 

এছাড়াও কাজ করার সময় ব্রেক দেওয়াটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এক দেড় ঘণ্টা টানা কাজ করার পর ১০-১৫ মিনিটের জন্য ব্রেক নিন, কম্পিউটারের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে অন্তত বিশ ফিট দূরের কোন জিনিসের দিকে ১ মিনিট তাকিয়ে থাকুন। খোলা জায়গায় একটু হাঁটাহাঁটি করে আবার কাজ করতে বসুন। 

৪। পারফেকশনিজমকে না বলুন 

সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার কোন কন্টেন্টই পারফেক্ট হবে না এমন একটা ধ্যান ধারণা রাখতে হবে। কারণ পারফেকশন আনতে গিয়ে যদি কনটেন্টটাই বানানো না হয় তাহলে তো আর হলো না। মনে রাখবেন, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো।

অর্থাৎ কোনকিছু না করার থেকে একটা  কিছু করা অনেক ভালো। ধারাবাহিকতা অন্তত বজায় থাকে। 

একটু থামুন, আপনারা আবার ভাববেন না যে আমি যাচ্ছে তাই বা আজে বাজে কন্টেন্ট তৈরি করাকে উৎসাহিত করছি। আসল কথাটা হলো, মাত্র ২০-২৫ সেকেন্ডের একটা ইন্সটাগ্রাম ভিডিও তৈরি করার জন্য তো আর আপনি সারাটা দিন নষ্ট করতে পারেন না।

যথাসম্ভব কম সময়ে অডিয়েন্স পছন্দ করে এমন কন্টেন্ট বেশি বেশি তৈরি করার চেষ্টা করুন। একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, “Perfectionism can be killer”

৫। স্বপক্ষে লড়ুন

প্রত্যেকটা কাজেই ব্যস্ততা নামক ব্যাপারটা আপাদমস্তক থাকে। কিন্তু নিজেকে কাজের সমুদ্রে গলাপানি অব্দি ডুবিয়ে রাখাটা মোটেও উচিত না। সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারদের একাধারে অনেক কাজ করতে হয়। মার্কেটিং, কন্টেন্ট ক্রিয়েটিং, এনালাইজিং সহ আরও অনেক কিছু। এতো কিছু একসাথে করতে গিয়ে দিনশেষে অনেকেই চাপ সামলাতে পারেন না। 

আপনি যদি দশ কাজের কাজী হোন তাহলে এই দশ কাজের কোনোটাই কাজের কাজ অর্থাৎ পার্ফেক্টলি হবে না। নিজের সাথে সৎ হোন, কাজের সাথে আপোষ করুন। নিজের বস বা সিনিয়রের সাথে নির্ভয়ে কথা বলুন। তাদেরকে বুঝান যে, কাজের বোঝা চাপিয়ে দিলেই ভালো রেজাল্ট আসে না। আপনাকে এসাইন করা কাজগুলোর একটা লিস্ট করে, সেগুলো করতে আপনার যে সময়টুকু লাগবে তা নিয়েও সিনিয়র বা বসের সাথে নেগোশিয়েট করুন।

বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুনঃ 

ট্রেন্ডিং ডিজিটাল মার্কেটিং টেকনিক সমূহ

উপসংহার

 মিলিয়ন মিলিয়ন ব্যবহারকারীদের বিলিয়ন বিলিয়ন পোস্টে সয়লাব সোশ্যাল মিডিয়া। এতো এতো পোস্টের ভিড়ে মাঝে মধ্যে দেখবেন আপনার কোন কন্টেন্টে ভালো রেজাল্ট আসছে, আবার অনেক সময় দেখবেন আশানুরূপ রেজাল্ট আসতেছে না। মাঝে মধ্যে আপনি চরম বিরক্তও হয়ে যেতে পারেন। তবে হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। ধারাবাহিক ভাবে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। নিয়ম মেনে কাজ করলে ভালো রেজাল্ট আসতে বাধ্য।

লেখক পরিচিতিঃ

Md.Arifur Rahman

Arifur Rahman, Digital Marketing Expert , SEO Expert , Digital Marketing Trainer, PPC Expert ,Social Media Specialist,Consultant, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার

Digital Marketing Expert | SEO Expert | Digital Marketing Trainer |
PPC Expert | Social Media Specialist | Consultant

Sharing Is Caring

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to Top